Tuesday, July 8, 2025

সাড়া দাও, সাড়া দাও, সাড়া দাও ।। ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ



জগন্নাথদেব মাসির বাড়ি থেকে ফিরে সিংহ দুয়ার দিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাবে আর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন মা লক্ষ্মী। মারাত্মক অভিমান। কোন অনুনয় বিনয়তেই কাজে এলো না। বলরাম, সুভদ্রা ততক্ষণে ভিতরে চলে গেছেন। শ্রীদেবী লক্ষ্মী দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। জগন্নাথ বাইরেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। সটান মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেও লক্ষ্মী মাও কী ভালো থাকেন? সেযুগেও কী দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলতো লক্ষ্মীরা? 

Published from Blogger Prime Android App

লক্ষ্মী দেবীর রাগ- অভিমানের সঙ্গত কারণ রয়েছে। জগন্নাথ দেবের সঙ্গে দেখা করতে তিনি গুণ্ডিচা মন্দির অবধিও গেছিলেন। কিন্তু জগন্নাথ যে তখন মত্ত, সীমাহীন উচ্ছ্বাসে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য। সেই যে লক্ষ্মীর হইল অন্তরে ব্যথা, সে ঘা সহজে শোকাবার নয়। এ দৃশ্য ফিরে ফিরে আসে বলেই কবিদের লিখতে হয়, “রাধার কি হৈল অন্তরের ব্যাথা। বসিয়া বিরলে, থাকয়ে একলে, না শুনে কাহারো কথা। সদাই ধেয়ানে, চাহে মেঘ-পানে, না চলে নয়ান-তারা। বিরতি আহারে রাঙাবাস পরে, যেমত যোগিনী-পারা।”

তিনরাত জগন্নাথ খোলা আকাশের নিচে মন্দিরের বাইরে কাটায়। তিনরাত জগন্নাথ লক্ষ্মী বিহনে কাটান। অভিমান করে তিন দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। তিন দিনের শাস্তি। দূরে কোথাও কোন ভবিষ্যতের যুগে গান বাজছে, সজনী গো সজনী দিন রজনী কাটে না!

বিহনেই বোধহয় সবচেয়ে বেশি গান লেখা হয়। কবিতা লেখা হয়। কত যে গানের কলি মাথায় আসে। হয়তো জগন্নাথ লক্ষ্মীও গুনগুণ করে এগুলোই গাইছেন। হয়তো অস্ফুটে বলা, “কাটেনা প্রহর তোমার বিহনে একা একা নিরালায়, কত যে দিন কত যে রাত পথ চেয়ে থাকি আশায়!”

জগন্নাথ জগতের নাথ। মুখের উপর দরজা সপাটে বন্ধ হতেই চলে যেতে পারতেন। চাইলেই অন্য কোন ঘরে বিশ্রাম নিতে পারতেন। যান নি। আসলে চলে যাওয়াটা সহজ। শত ভুলের পরেও সেগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে, আবার ফেল করে আবার ফিরে আসার নাম, থেকে যাওয়ার নামই সম্পর্ক। Short absences quicken love। বিহনে প্রেম বাড়ে। একটুকু ছোঁয়া, একটুকু কথা ও তার অনুরণন নিয়ে দিনরাত এক করে দেওয়া। 

তিনদিন ধরে জগন্নাথের আকুতি মিনতি শেষে লক্ষ্মী দেবী চাহনি মন্ডপে এসে উপস্থিত হন। এখানেও হয়তো আমাদের চারপাশের লক্ষ্মীদের ফিসফিস করে বলতে, সব রাগের একটা শেষ থাকে। মাত্রাবোধ থাকে। নারী মস্তিষ্ক বেজায় জটিল। কোথায়, কতদিন পরে গলে জল হয়ে যাবেন তারা এটা তারাই জানেন কিন্তু জগন্নাথরা এটুকু শুধু জানেন মানভঞ্জন হবেই। শুধু ধৈর্য ধরে থাকা। শুধু গেয়ে যাওয়া- “সাড়া দাও, সাড়া দাও, সাড়া দাও। উদাসীন থেকো না, সাড়া দাও।”

চাহনি মন্ডপ থেকে জগন্নাথের গোল্লা গোল্লা ছলছল চোখ দেখতে পেয়ে লক্ষ্মী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। তারপর? তারপর সেই যুগেও দিল কো যব খুশি ছুঁ যায়ে, কুছ মিঠা হো যায়ে! আনা হলো সেই দেবভোগ্য মিষ্টান্ন।জগন্নাথের চোখের মতোই গোল্লা গোল্লা গোল্লা গোল্লা- রসগোল্লা। হাড়ি হাড়ি রসগোল্লা খেয়ে ও খাইয়ে দুজনে ফিরলো শেষে ঘর। বাইরে রেখে এলো কত না গভীর অর্থযুক্ত এক হাঁড়ি জগতের গল্প! জয় জগন্নাথ।

পবিত্র আশুরা। মুসলমানদের আশুরা, হুসাইনি ব্রাহ্মণদের আশুরা।

নিজস্ব প্রতিবেদক:
এই পৃথিবীর এক অদ্ভুত সত্য হচ্ছে— এই পৃথিবীতে কিছু গল্প ইতিহাস হয়ে যায়, আর কিছু ইতিহাস রূপকথার মত শোনায়।
হুসাইনি ব্রাহ্মণদের ইতিহাস তেমনই এক বিস্ময়কর অধ্যায় যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও আত্মত্যাগ এক অপূর্ব মানবিক বন্ধনে মিলিত হয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন না, কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইনের পাশে দাঁড়িয়ে হিন্দু ধর্মের ব্রাহ্মণ জাতির একটি উপশাখা নিজেদের পরিচয় অমর করে রেখেছে একটি ইসলামী মহান যুদ্ধের অংশীদার হিসেবে। আর ইতিহাসের এমন বিরল সংমিশ্রণ আমাদের শিখিয়েছে মানবতা ধর্মের সীমানা মানে না।

ইতিহাসে এই ব্রাহ্মণরাই "হুসাইনি ব্রাহ্মণ" হিসেবে পরিচিত। 

ঐতিহাসিক ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের মোহররম মাস। বর্তমান ইরাকের ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বাধীন উমাইয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ইমাম হুসাইন। শাসকের অন্যায় ও ধর্মদ্রোহিতার প্রতিবাদে একটি শান্তিপূর্ণ অথচ প্রতিরোধমূলক অবস্থান নিয়ে ইমাম হুসাইন পরিবারসহ কারবালায় অবস্থান করছিলেন। তার সঙ্গে ছিলো তার পরিবার, কিছু বিশ্বস্ত সাহাবি, এবং এমন কিছু ব্যক্তি, যারা ধর্ম, জাতি বা ভূখণ্ডের বাইরেও সত্য ও ন্যায়ের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। আর এখানেই ঘটে ইতিহাসের অন্যতম অবিশ্বাস্য ও অসাম্প্রদায়িকতার উদাহরণ। এই ইতিহাসে যোগ হয় রাহাব সিধ দত্ত বা রাহিব দত্তের নেতৃত্বে ভারত থেকে আগত একদল ব্রাহ্মণ যোদ্ধার। কথিত আছে, রাহিব দত্ত ও তার সাত পূত্র কারবালায় ইমাম হুসাইনের পক্ষে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। 

মৌখিক ইতিহাস, পারিবারিক উপাখ্যান এবং কিছু সুফি চিত্রকল্পে এই ঘটনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। হুসাইনি ব্রাহ্মণদের বিশ্বাস, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা শুধু এক ধর্মীয় সংগ্রামে অংশ নেননি তাঁরা মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর শপথও নিয়েছিলেন।

হুসাইনি ব্রাহ্মণরা আদতে মোহিয়াল ব্রাহ্মণদের অংশ। মোহিয়াল শব্দটি এসেছে 'মহা-যোদ্ধা' থেকে। এই ব্রাহ্মণ গোষ্ঠী ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষত পাঞ্জাব ও কাশ্মীরে, বহু শতাব্দী ধরে বসবাস করে আসছে। মোহিয়ালরা ধর্মীয় দীক্ষা ছাড়াও রণশিল্পে পারদর্শী ছিলেন।
এই মোহিয়াল ব্রাহ্মণদের আবার সাতটি শাখা। 
দত্ত (Dutt)
চিবার (Chhibber)
ভিমওয়াল (Bhimwal)
লাউ (Lau)
বৈদ (Vaid)
মল্ল (Mohan) এবং 
মোহন (Bali)

এদের মধ্যে দত্তরা সর্বাধিক পরিচিত। এবং হুসাইনি ব্রাহ্মণদের মূল উপশ্রেণিও এই "দত্ত ব্রাহ্মণ" রাই। তাঁরা মূলত নিজেদের রাজা দশরথের সন্তান পুত্র শ্রুতি কর্মা, কিংবা অনেকে নিজেদের শ্রী রামের পুরুষানুগত বলেও দাবী করেন। আর তাদের এই গৌরবোজ্জ্বল বংশপরিচয় শুরু থেকেই তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও বীরত্বের সংস্কার গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে, হুসাইনি ব্রাহ্মণরা দ্বৈত ধর্মীয় পরিচয় বহন করেন। তারা হিন্দু ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা যেমন মানেন, ঠিক তেমনই ইমাম হুসাইনের শহীদিকে শ্রদ্ধা জানাতে মুসলিম রীতিতে মহররমও পালন করেন। কিছু পরিবার মহররম এর প্রথম দশ দিন নিরামিষ আহার গ্রহণ করেন, অনেকেই তাজিয়া বানান ও মিছিলেও অংশ নেন।

তাদের এই রেওয়াজে মিল পাওয়া যায় সুফি ও হিন্দু আধ্যাত্মিকতার। শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও কোরআন, দুই গ্রন্থের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চলে অনেক পরিবার। প্রাচীন আমলের মিথ অনুযায়ী— "Wah Datt Sultan – Hindu ka dharm, Musalman ka iman, Adha Hindu, adha Musalman!"

এই প্রবাদ কিন্তু হুসাইনি ব্রাহ্মণদের পরিচয়ের দ্বৈততা নয়, বরং একটি যুগপৎ ধর্মীয় ও মানবিক আত্মিকতার প্রতীক।

যাই হোক, কারবালায় ফিরি।

কারবালার যুদ্ধ থেকে যারা বেঁচে ফিরেছিলেন, তাঁদের কিছু অংশ ভারতে ফিরে আসেন। মূলত পাঞ্জাব, হিমাচল, কাশ্মীর এবং উত্তর প্রদেশের কিছু অঞ্চলে তাঁরা বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ আমলে অমৃতসর, দিল্লি, কাবুল এবং এমনকি লাহোর ও করাচিতেও তাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

অমৃতসর শহরে 'মাই কারমুন দত্তানি' নামের এক নারী বিচারপ্রধান হিসেবে কাজ করতেন বলে লোককথা আছে। এই নারী ছিলেন একজন সমাজনেত্রী, যিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা করতেন। এই দত্তদের সামাজিক অবস্থান ছিল বেশ উচ্চ। তাঁরা শিক্ষা, প্রশাসন ও সামরিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।

কালের গহ্বর পেড়িয়ে এসে বর্তমান সময়ে হুসাইনি ব্রাহ্মণদের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। একদিকে আধুনিকীকরণ, অন্যদিকে ধর্মীয় সংকীর্ণতা তাঁদের আত্মপরিচয়ে দ্বিধা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর বহু হুসাইনি ব্রাহ্মণ উদ্বাস্তু হন এবং তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে থাকে।

বর্তমানে দিল্লি, মুম্বাই, অমৃতসর, কানপুর ও পুনেতে কিছু পরিবার এই ঐতিহ্য লালন করেন। তাদের সন্তানরা এই ইতিহাস জানলেও অনেক সময় ধর্মীয় বিভাজনের ভয়ে তা প্রকাশ্যে প্রচারও করেন না।

তবুও ঐতিহ্য ধরে কিছু পরিবার এখনো মহররমে জুলুসে অংশ নেন, 'নওহা' ও 'মার্সিয়া' পাঠ করেন এবং প্রতিবছর কারবালার শহীদদের স্মরণে উপবাস রাখেন।

অনেকে জানলে অবাক হবেন যে, বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত, তার পিতা সুনীল দত্ত কিন্তু এই হুসাইনি ব্রাহ্মণদের বংশধর! তার পরিবার মহররম পালন করত এবং ইমাম হুসাইনের স্মরণে তাজিয়া দান করত। বহু সাক্ষাৎকারে তিনি এই ঐতিহ্যকে গর্বের সাথে স্মরণ করেছেন।

আজকের পৃথিবী যখন সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় উগ্রতা এবং সামাজিক বিভাজনে জর্জরিত, তখন হুসাইনি ব্রাহ্মণদের ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, একটি মানুষ তার ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে কেবল মানবতার পক্ষেও দাঁড়াতে পারে।

ইমাম হুসাইনের পক্ষে দাঁড়ানো মানে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এক হিন্দু যোদ্ধার তার জন্য প্রাণ দেয়া এই ইতিহাসের অলৌকিকতা নয়, বরং সত্য ও ন্যায়ের চিরন্তন আবেদন। সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা একটি সমাজকে কতখানি স্থিতিশীল ও উদার করতে পারে, তার অন্যতম শিক্ষাও এই "হুসাইনি ব্রাহ্মণদের" কীর্তিগাথা। হুসাইনি ব্রাহ্মণরা কন্তু ইতিহাসে শুধু একটি জাতিগোষ্ঠী নয়— তারা এক আদর্শ, এক বার্তা— “মানবতাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধর্ম।”

আসলে হুসাইনি ব্রাহ্মণদের ইতিহাস এক বিস্ময়কর সংমিশ্রণ। যেখানে ধর্ম, আত্মত্যাগ, সহানুভূতি এবং মানবিকতায় পূর্ণ এক গল্প গাঁথা হয়েছে। আজ যখন ধর্মীয় বিভাজন আমাদের সমাজকে ক্ষতবিক্ষত করছে, তখন এই ইতিহাস আমাদের শেখায়, সত্যের জন্য সংগ্রামে ধর্ম নয়, মনুষ্যত্বই প্রধান।

ইতিহাস কিন্তু শুধু অতীত নয়, এটা কিন্তু ভবিষ্যতেরও প্রতিচ্ছবি। হুসাইনি ব্রাহ্মণদের ইতিহাস আমাদের শেখায়, মানবতা ও সহমর্মিতা সব ধর্মের ঊর্ধ্বে। তাদের বংশধররা হয়তো সংখ্যায় অল্প, কিন্তু তাদের ইতিহাস যেমন শিক্ষণীয়, তেমনই এটি মহাকাব্যের মতোই বিস্ময়কর; গর্বের।

লেখাটি তৈরি করেছেন স্নেহাস্পদ প্রসেনজিৎ রায় 

তথ্যসূত্র:
1. উইকিপিডিয়া 
2. .P. Russell Stracey, "History of the Mohyals" (1911)
3. Sisir Kumar Mitra, "The Vision of India" (1905)
4. Mohyal Sabha publications (Delhi Chapter Archives)
5. গুগল
6. চ্যাটজিপিটি

Monday, July 7, 2025

কবিতার পাঠক এবং পাঠকের কবিতা।। তৈমুর খান

Published from Blogger Prime Android App
কবিতার পাঠক এবং পাঠকের কবিতা
তৈমুর খান 

--------------------------------------------------------------------
আবেগ যখন চিন্তা খুঁজে পায়, চিন্তা যখন শব্দ খুঁজে পায়, কবিতা তখন সহজ অনবদ্য আবেদনেই পাঠককে নাড়া দেয়। এই পাঠকই তখন প্রকৃত কবিতা খুঁজে পান,এই কবিতাই তখন প্রকৃত পাঠক খুঁজে পায়। দুইয়েরই যুগপৎ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এর কখনও ছেদ পড়ে না। 
প্লেটো বলেছিলেন:
“Beauty of style and harmony and grace and good rhythm depend on simplicity.”
 অর্থাৎ শৈলীর সৌন্দর্য এবং সাদৃশ্য এবং করুণা এবং ভালো ছন্দ সরলতার উপর নির্ভর করে।
 কথাটি মনে এলো বেশ কিছুদিন থেকেই কিছু কবির কবিতা পড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে: এগুলি কি কবিতা? কঠিন করে লিখলেই কি কবিতা হয়? ঘুরিয়ে পেচিয়ে জবরজং শব্দের আড়ালে নিজের ভাবকে কি প্রতিস্থাপন করা যায়? উপলব্ধির বা অনুভূতির সূক্ষ্ম মোচড় সেগুলোতে খুঁজে পাই না। তার বদলে বরং এক কৃত্রিম কারিশমা জাহির করেন কবিরা। কী লিখতে চান, কী বলতে চান, কী তার ছান্দিক চল তার কিছুই খুঁজে পাই না। কবিতায় রহস্যময়তা থাকে। না বলা থাকে। শূন্যতার স্পেস থাকে। নীরবতার গভীর অন্তর্দৃশ্য থাকে। কিন্তু এলেবেলে পরিশ্রমলব্ধ ইট-কাঠ-পাথরের দেয়াল তুলে দুর্বোধ্য নির্মাণ সহজে মেনে নেওয়া যায় না। কারণ তা শিল্প নয়। পরিশীলিত শিল্পনির্মাণ এবং তার শিল্পের মেকানিজম প্ল্যাটফর্ম তো অনেক সময় বিষয় এবং অর্থের ঊর্ধ্বে আপনা থেকেই মনকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এইসব লেখা পড়তে গিয়ে বারবার বিকর্ষিত ও বিরক্তি বোধ জাগ্রত হচ্ছে। মতামত তো দূরের কথা, পড়ে দেখার ইচ্ছাও জাগে না। সহজ এর মধ্যেই যে সৌন্দর্য থাকে, যে সত্য থাকে, যে অন্তর থাকে তা কি অন্যকিছুর মধ্যে থাকে? এই কারণেই ওয়াল্ট হুইটম্যান বলেছিলেন:“The art of art, the glory of expression, and the sunshine of the light of letters, is simplicity.”
অর্থাৎ শিল্পের শিল্প, প্রকাশের মহিমা এবং অক্ষরের আলোর রোদ, সরলতা।
   একথা অনেকেই না মানতে পারেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যাঁদের কবিতা পড়ে বর্তমান প্রজন্ম অনুপ্রেরণা পাবে, বা কবিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবে এমনটি হয় না। বরং তার বদলে বর্তমান প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবেন এবং কবিতার প্রতি বিমুখ হবেন। শুধু ফেসবুক বলেই নয়, আমাদের কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে চিহ্নগুলি বহন করে নিয়ে চলেছি আমরা তা যেন সত্য-সুন্দরের অনুসারী হয়। প্রতিটি কাজেই ফুটে উঠে আমাদের যত্ন ও নিষ্ঠা এবং অন্তরের স্পর্শ এটাই খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকে ব্যতিক্রমী করতে গিয়ে আমরা ব্যতিহার করে ফেলছি। শিল্পসাধনা করতে গিয়ে শিল্পহীন হয়ে উঠছি। কবিতা লিখতে গিয়ে ভূরি ভূরি অকবিতার জন্ম দিচ্ছি। যেখানে সারল্য প্রয়োজন, সেখানে বজ্রকঠিন অসুন্দরের আমদানি করছি। ফলে কবিতার প্রাণ হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু কঙ্কালসর্বস্ব নির্মাণ এবং কিম্ভূতকিমাকার এক শিল্প প্রসব করে চলেছি। আমাদের কিছু ভক্ত ওরফে অপাঠক আমাদের খুব সুনাম করছে। আসলে তারা যে পাঠকই নয়, তাদের মন্তব্যগুলোও দায়সারা, কবিতা সম্পর্কে তারা যে সীমিত জ্ঞানের অধিকারী, নতুনত্বকে ধারণ করার ক্ষমতা তাদের যে নেই, এবং সর্বোপরি তাদের প্রশংসা বা গুণগান কবিদের যে কোনো কাজে লাগে না তা বলাই বাহুল্য।
 রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: 
"সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ যে
 সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।"
 সহজ করে বলা বিশ্বকবির কাছেও সেই সময় কঠিন ছিল। আজকের দিনেও কঠিন। যিনি যত বড় কবি অথবা যত বড় সাধক, তিনি তত সহজ, তত অনন্ত, তত অনপনেয়। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব অন্যান্য মহাপুরুষদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে পেরেছিলেন এই সরলতার কারণেই। তাঁর ধর্মমত সম্পর্কে মাত্র চারটি শব্দই যথেষ্ট ছিল। তাই তিনি বলতে পেরেছিলেন:
 "যত মত তত পথ"
 এত সহজ করে বলা একজন বড় সাধকেরই পরিচয়। তেমনি কবিদের ক্ষেত্রেও একটা বড় পরিচয় তাঁদের সহজাত সারল্য। বহু ভাব, জীবনের বহুমুখী প্রাচুর্য, শাশ্বত প্রবৃত্তির উন্মোচন, সময়ের গভীর অন্তঃক্ষরণ, যুগের সংকট ও বিস্ময়, শূন্যতা ও নীরবতার নিরবধি স্পেস কয়েকটি শব্দে, কয়েকটি চিত্রকল্পের আঁচড়ে, কয়েকটি ব্যঞ্জনার ইশারায় অথবা না বলা শূন্যতায় তা উচ্চারিত হতে পারে। কবি যখন নিজেকে নিয়ে লেখেন, তখন কবি নিজেও এই সময়ের, এই সমাজের, এই রাষ্ট্রের, এই সভ্যতারই একজন সদস্য। কোনো না কোনোভাবে তিনি বিচ্ছিন্ন থেকেও অবিচ্ছিন্ন। তাঁর জীবন-সংস্কৃতি, আত্মচেতনা, আত্মঅবস্থান সবকিছুই সেখানে এসে উপস্থিত হয়। গোচরে-অগোচরে তিনি তার অনুকার হয়ে ওঠেন। তাই নিয়েই তো কবিতা!
 তখন এই সময়ের কবিই লিখতে পারেন:
"তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।

আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।

তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।

এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …

অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
(প্রেমিক : জয় গোস্বামী) 
কবিতার ব্যাখ্যা তখন খুব একটা প্রয়োজন হয় না। উপলব্ধিটাই আমাদের হৃদয়ের উৎস হয়ে যায়। যে গল্পের জন্ম হয় তা আসলে আমাদের একার গল্প নয়। একার ভালো লাগা, একার যাপন, একা প্রেমের স্রোতে ভেসে যাবার, হেসে উঠবার, স্বপ্ন দেখবার, আনন্দে শিহরিত হবার মুহূর্তগুলিও সকলের সব সময়ের জন্যই মর্মরিত হতে বাধ্য। অথচ কবিতাটিতে একটাও কঠিন শব্দ নেই। ঘুরিয়ে পেচিয়ে নাক দেখানো নেই। কষ্টকল্পিত বাহাদুরি নেই। সহজ সাবলীল এক গতি ও অনুভূতির কাল্পনিক প্রক্ষেপণ আছে। পাঠে বিস্মিত হবার ও পুলকিত হবার অবকাশ আছে। 
বিভাস রায়চৌধুরী ছন্দোবদ্ধ ভিন্নধর্মী এক কবিতায়  সেভাবেই আমাদের টানলেন। কবিতার কিছুটা অংশ এরকমই:
"কখনও আমি শব্দ ভেঙে
মর্ম ছুঁতে যাইনি
চাইনি কিছু পাইনি কিছু
চাইনি, কিছু পাইনি।

এই যে আমি স্বপ্নকামী
জ্বরের ঠোঁটে বিষ।
বীর্যপাত, তরল চাঁদ
দেখছি ভাগ্যিস

কখনো আমি বমির ঝুঁকে
গলন প্রিয় মেম
রাত জেগেছি, সঙ্গী সাদা
বিদায়ী কনডম।

ঘুমাও পাখি, আমার হাতে
চমকপ্রদ পেন।
কাটছি লেখা, হাঁটছি সুখে
সঘন শ্যাম্পেন।

সব বুঝেছি, সব মুছেছি
বুঝলি খোকা খুকু!
খিদের দেশে ল্যাজ বেড়েছে।
ছন্দ, মানে কুকুর

তাই তার টুঁটি কামড়ে ধরে
হিংস্র হয়ে যাই।
একটা-দুটো ফুল এনেছে।
আমারই বনসাই

এই যে আমি বামন, তবু
বাল্য প্রেমে ভরা।
চাঁদ ধরতে পারিনি, তুমি
বকো বসুন্ধরা।
(সমস্ত পাগল আমি)
 আত্মগত শূন্যতা আর বঞ্চনাকে সহ্য করেও 'খিদের দেশে ল্যাজ বেড়েছে। ছন্দ, মানে কুকুর' লিখতে পারা শব্দবন্ধে গতানুগতিক প্রকাশ নেই। অন্তর্জ্বালাকে সরাসরি পাবকের প্রজ্জ্বলনে তিনি শিখায়িত করেননি। এমনকী হিংস্র হয়ে যাওয়াতেও বাংলা ভাষা ভীত হয়নি। তেমনি 'বীর্যপাত', 'কনডম', 'শ্যাম্পেন' শব্দগুলি ব্যবহার করাতেও বাংলা ভাষা কলঙ্কিত হয়নি। বরং সুচারু কাব্যিক নিবেদনে তা প্রাখর্য্য পেয়েছে। কবিতার তরঙ্গ আত্মজৈবনিক অভিঘাতে মানবিক প্রশ্রয় পেয়েছে। 'বকো বসুন্ধরা' ব্যবহার করায় তা সময়কে এবং ভৌগোলিক সীমাকে অতিক্রম করেছে।
 শ্রীজাত এই সময়ের আর এক উল্লেখযোগ্য কবি। শুধু ছন্দের জন্য নয়, শুধু অনুপ্রাস আর বিরোধাভাস অলংকারের জন্য নয়, তাঁর মানবমঙ্গলের কাঙ্ক্ষা সভ্যতাগামী প্রাচুর্যে যে ব্যাপ্তি ও নির্মাণের অভিঘাত রচনা করেছে তাতে তিনি অসাধারণ হয়ে উঠেছেন। তাঁর একটি ছোট্ট কবিতা:
"মৃত্যু সেজে দাঁড়িয়ে আছে মুখনিচু এক গুরুত্বহীন গাছ
হাত রাখো তার বুকের কাছে, দেখতে পাবে আলো-গহীন গাছ।

ঘোড়ারা সব মৃত এখন, প্রান্তরে এক চাঁদ দাঁড়িয়ে চুপ…
আমার মতো একলা ঘরে কেউ বুঝি আর শোনে মহীন, গাছ?

রোদ চড়েছেন বাবা’র মতো, দেহাতি মা পাঁচিল সারাদিন
ভাই ধুলো, সে গ্রামকে বেড়ায়… চুপটি থাকে ছোটি বহিন গাছ

মৃত্যু সেজে দাঁড়িয়ে আছে মুখনিচু এক গুরুত্বহীন গাছ
হাত রাখো তার বুকের কাছে, দেখতে পাবে আলো-গহীন গাছ।"
 (গাছ)
 'গাছ' শব্দটি শুধু গাছের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মৃত্যুর পরিধি হয়ে জীবনদায়ী আলোর মুগ্ধতায় সে আত্মগোপন করে আছে। তারও প্রাণের স্পন্দন আছে। বুক আছে। যেখানে হাত রাখা যায়। 'মহীনের ঘোড়া' অর্থাৎ প্রেমিক ইচ্ছার অবদমিত আবেগেরা মরে গেছে। কিন্তু চাঁদ আছে। চাঁদের জ্যোৎস্না আছে। নীরবতার মাঝে কবি শুধু গাছের কথা ভেবেছেন। বাবা রোদ, মা পাঁচিল, ভাই ধুলো, ছোটি বহিন গাছ, আর কবি? কবি তো প্রেমিক। গাছের কাছে আলো দেখেছেন। সকলেই শাশ্বতকালীন মানবসভ্যতার চরিত্র। সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে মহীনের ঘোড়া নয়, নিরীহ গাছ, সভ্যতার গাছ, ছায়া প্রদানকারী গাছ, ফুল-ফল প্রদানকারী গাছই দরকারি। 'ছোটি বহিন গাছ' শব্দটি স্নেহময়, আবেগসম্ভূত, মানবসম্পর্কীয় চিরন্তনতায় ভাস্বর। কবিতাটির নির্মাণে শব্দ ব্যবহারের জাদুও দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। কবি পরপর লিখেছেন: 'গহীন', 'মহীন','বহিন' এর মতো শব্দগুলি। কবিতাটি এই ভাবেই আলো পেয়েছে। একটি নির্মাণ সহজতর বিনির্মাণে কতটা উত্তরণ দাবি করতে পারে তা পরীক্ষিত।
 রুদ্র গোস্বামী তাঁর প্রতিটি কবিতাতেই একটি সহজ আবেদন নিয়ে আসেন। তাঁর ভাষার মধ্যেই এমন এক মানবিক স্পর্শ পাওয়া যায় যার মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতিকেও নতুন করে চিনতে শিখি। আমাদের রাগ-বৈরাগ্য অভিমান-ভালোবাসা তাঁর শব্দের জাদুতে আয়নার মতো সামনে দাঁড়ায়। তখন ব্যক্তি আমির প্রাচীর ভেঙে বিশ্ব-আমির দিকে ছুটে যায়। আমাদের বালকসত্তা প্রৌঢ়সত্তা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা চিরন্তনকে চিনতে শিখি। একটি কবিতার কিছুটা অংশে তিনি লিখেছেন:
"প্রেমিক হতে গেলে ঋতু বুঝতে হয়
যেমন কোন ঋতুটার বুক ভরতি বিষ
কোন ঋতুটা ভীষণ একা একা, কোন ঋতুটা প্লাবন
কোন ঋতুতে খুব কৃষ্ণচূড়া ফোটে
ছেলেটা ঋতুই জানে না
ও শুধু দেখে আর চেনে, বুঝতে জানে না।
ছেলেটা কখনো প্রেমিক হতে পারবে না
প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয়।
ছায়ার মতো শান্ত হতে হয়।
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
জেদি মানুষেরা কখনও গাছ হতে পছন্দ করে না।
তারা শুধু আকাশ হতে চায়।"
 (প্রেমিক হতে গেলে)
 কবিতাটিতে অচেনা কোনো শব্দই নেই, ঋতু চেনার কথা আছে। এই ঋতু শুধু সময়ের নয়, আমাদের জীবনেরও ঋতু। আমাদের স্বপ্নেরও ঋতু। আমাদের দুঃখ-দুর্দশারও ঋতু। 'ঋতু' শব্দটি এখানে মহীয়ান হয়ে উঠেছে। আমাদের বেঁচে থাকার পারম্পর্যগুলি প্রেমিক-বাসনায় উদ্বোধিত। তারপর 'গাছ' চরিত্রের মধ্য দিয়ে সর্বংসহ বিশ্বাস অর্জনের এক প্রসন্ন বিধান লাভ করার কথা আছে যা কবিতাটিকে যুগোত্তীর্ণ করেছে। শব্দের জৌলুস দরকার হয়নি। প্রকাশের আলো-আঁধারি স্পেসেরও প্রয়োজন পড়েনি, অথচ এক ভালো লাগা থেকে গেছে। এই কারণেই মার্কিন
জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী, বিশ্বতাত্ত্বিক, লেখক এবং বিজ্ঞান যোগাযোগকারী নিল দেগ্রাসে টাইসন(১৯৫৮) বলেছেন :
“Some of the greatest poetry is revealing to the reader the beauty in something that was so simple you had taken it for granted.”
অর্থাৎ কিছু সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা পাঠকের কাছে এমন কিছুর সৌন্দর্য প্রকাশ করছে যা এত সহজ ছিল যে আপনি এটিকে মঞ্জুর করে নিয়েছেন।
 প্রকৃত কবিতা পাঠক এমন কিছুর সন্ধান পান এই সব কবিতায় যা তারা আপন করে নিতে বাধ্য হন। এই 'এমন কিছুর' মধ্যে থাকে ভাষার সৌন্দর্য, ভাবের আন্দোলিত আবেগময় স্পর্শ। অন্তঃসলিল ফল্গুর মতোই এক স্রোতের টান, যেখানে চিরন্তন বিশ্বচৈতন্যের তরণী ভাসতে থাকে। পাঠক তরণীর যাত্রী হয়ে ওঠেন। ঠিকানা খুঁজতে থাকেন। কেউ কেউ ঠিকানাও পেয়ে যান। রবার্ট ফ্রস্টের কথায় বলতে হয়:
"Poetry is when an emotion has found its thought and the thought has found words."
অর্থাৎ কবিতা হল যখন একটি আবেগ তার চিন্তা খুঁজে পেয়েছে এবং চিন্তা শব্দ খুঁজে পেয়েছে।

লেখক: কবি, ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক, কলকাতা।

Sunday, July 6, 2025

ভুতে ভুতে ভাব।। বিজন বেপারী



ভুতে ভুতে ভাব
বিজন বেপারী 

মেছো ভুত আর গেছো ভুতে
বন্ধু ভারি খুব 
জেলে পাড়ায় ঘাপটি মারে
মগ ডালেতে চুপ।

যতো মাছ‌ই পায় না জেলে
ওরাই দুজন খায়
জেলে ভাবে, মাছগুলো ভাই
কোথায় চলে যায়?

হঠাৎ দ্যাখে মাছের কাঁটা 
নায়ে আছে পড়ে 
চালাক জেলে সব বুঝে যায় 
আগুন জ্বেলে ধরে।

জেলের ডিঙি শ্বাস ফিরে পায়
ভরে এবার মাছে
গেছো ভুত আর মেছো ভুতে
কান্না করে গাছে।



রবি ঠাকুর ।। মোঃ সৈয়দুল ইসলাম

 রবি ঠাকুর 

মোঃ সৈয়দুল ইসলাম




কবিগুরু রবি ঠাকুর
বাঙালি এক কবি,
হদয় মাঝে এঁকেছিলেন
দুই বাংলারই ছবি।

দুই বাংলাকে ভালোবেসে
লিখেছেন মধুর গান,
যতোই শুনি কাছে টানে
মন করে আনচান।


লিখেছেন কতো গল্প কবিতা
শিশু কিশোর ছড়া,
মুখের ভাষায় ছড়িয়ে গেছে
সুবিশাল এই ধরা।

কাব্যকথায় রবি ছিলেন
সুভাস ছড়ানো ফুল,
বিশ্ব বুকে হাজারো কবি
নেই তাঁর সমতূল।

গাছই আপন।। বিজন বেপারী

গাছ‌ই আপন
বিজন বেপারী 

Published from Blogger Prime Android App

গাছ লাগালে দুঃখ কমে
সকল মানুষের
একটু জমি ফেলনা না যায় 
যেথায় মাটির ঘের।

বাড়ির উপর আশে পাশে 
লাগাই ফলের গাছ 
ছোট্ট শিশুর ভরবে যে মন
ছাড়বে না এর পাছ।

প্রকৃতিতে অক্সিজেন দেয়
ফলমূল খাদ্য
হাজার হাজার টাকা আনে
বাজে বিয়ের বাদ্য।

অকৃতজ্ঞ নয় তো যে গাছ
প্রতিদান সে দেয়
বৃক্ষরোপণ করি সবাই 
নিধন‌ই অন্যায়।


ছড়ার মজা বিজন বেপারী

 ছড়ার মজা 

বিজন বেপারী 


ভাটা মাছে উজান টানে
নদী খালের জলে 
ভারি মজা এই যে দৃশ্য 
খোকা খুকি বলে।

গভীর বনে মৌমাছিরা
মধুর বানায় চাক
মধুর লোভে হানা দিয়ে
ঘোর বিপদে কাক।

টিনের চালে নূপুর বাজে 
টুন টুনা টুন টুন 
ভালো লাগে আষাঢ় মাসে 
পান্তা,মরিচ নুন।

মেঘেরা হয় উথাল পাতাল 
সাদা কালো মেঘ 
ছুটছে তারা এমনি করে 
যাবে ছুটে হেগ!

সাড়া দাও, সাড়া দাও, সাড়া দাও ।। ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

জগন্নাথদেব মাসির বাড়ি থেকে ফিরে সিংহ দুয়ার দিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাবে আর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন মা লক্ষ্মী। মারাত্মক অভিমান। কোন অনুনয়...

Popular Post